জাগো প্রহরী : করোনাভাইরাস পরিস্হিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের একলা চলো নীতিতে অসন্তুষ্ট ১৪ দলের শরিকরা। তাদের মতে, সরকার শুধু প্রশাসনকে দিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলার চেষ্টা করছে। এতে নানা কাজে সমন্বয়হীনতা ও দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে কাজ না করায় দুর্যোগ মোকাবেলায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না।
১৪ দলের শরিক কয়েকটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেন, জনসচেতনতা তৈরি, ত্রাণ তৎপরতাসহ স্বেচ্ছাশ্রমের কাজগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। করোনা মহামারি মোকাবেলায় দল-মত-নির্বিশেষে মানুষকে সরকারের কাজে সম্পৃক্ত করা দরকার। এতে স্বাস্থ্যসেবা, ত্রাণ বিতরণ, জনসচেতনতার কাজে গতি বাড়বে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করলে যাঁরা দুর্নীতি করছেন তাঁরাও ভয় পেয়ে যাবেন। দুর্নীতিবাজদের পর্যবেক্ষণ করাও তখন সহজ হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা খুবই দরকারি ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোই জনমত গঠন করে। আমলাতন্ত্রের হুকুমজারি দিয়ে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে এটা করা যায় না। সরকার মূলত আমলাতন্ত্রের ওপরই নির্ভর করেছে, তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করেনি। তবে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম জীবিত থাকাকালে আমরা নিজেদের উদ্যোগে কিছু কাজ করেছি। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ দলের শরিকদের কাছ থেকে কোনো মতামত চাওয়া হয়নি। আশা করছি শিগগিরই এটা করা হবে।’
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকার জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না, মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। যতই দিন যাচ্ছে অবস্থা নিম্নগামী। তারা প্রশাসননির্ভর হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না, এখানে শুধু প্রশাসননির্ভর হয়ে কিংবা প্রশাসনকে বাদ দিয়ে কাজ করা যাবে না। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। মহামারিকালে নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করার নীতি গ্রহণ করতে হবে।’
জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মহামারি মোকাবেলায় যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার তা আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে দেখছি না। মহামারি ব্যবস্থাপনাটা সুষ্ঠু হচ্ছে না। সব কাজই প্রধানমন্ত্রীকে করতে হচ্ছে। একজন ব্যক্তির পক্ষে ১৬ কোটি মানুষের সব কাজের দেখাশোনা করা সম্ভব নয়। আমরা চাই, রাজনৈতিক দল ও জোট এমনকি বিরোধী দলকেও সঙ্গে নিয়ে মহামারি মোকাবেলায় কাজ করা হোক। সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে। সরকারের উচিত সবাই একসঙ্গে কাজ করবে—এমন একটি আবহ তৈরি করে দেওয়া।’
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘মহামারি মোকাবেলায় নীতিনির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়টি জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখবেন বলে আশা করি।’
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সংকট মোকাবেলায় শুধু আমলানির্ভরতা কিংবা বিশেষ গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হলে জনস্বার্থ রক্ষায় ব্যাঘাত ঘটে। সংকট মোকাবেলায় জনমতকে প্রাধান্য দিতে হয়। এখন যেসব সংকট তৈরি হয়েছে তার বড় কারণ জনমতকে প্রাধান্য না দেওয়া। এমনকি সংকটকালে ১৪ দলের শরিকদেরও কোনো পরামর্শ চাওয়া হয়নি। আমরা উদ্যোগী হয়ে একাধিক পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।’
১৪ দলের সূত্রগুলো জানায়, মহামারির শুরুর দিকেই ১৪ দলের শরিকদের পক্ষ থেকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়। তবে আওয়ামী লীগের আগ্রহ না থাকায় শরিক দলগুলো যে যার মতো করে কাজ শুরু করে। তারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সরকারকে নানা পরামর্শ দিতে থাকে। কিন্তু এগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। সরকার শুরু থেকেই প্রশাসনের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ পরিচালনার নীতি নেয়। তবে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তৃণমূলে প্রশাসনের কাজে সহযোগিতার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ত্রাণকাজে প্রশাসনকে সহায়তার কাজে কিছুটা যুক্ত হন। কিন্তু ১৪ দলের শরিকরা সে সুযোগও পাননি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম নিজ উদ্যোগে গত এপ্রিল ও মে মাসে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে মহামারি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সে আলোচনাগুলোতে শরিক দলগুলো যে পরামর্শ দিয়েছিল তা আমলে নেয়নি সরকার। এমন উপেক্ষার ঘটনায় হতাশা বেড়েছে শরিকদের মাঝে।
জাগো প্রহরী/গালিব
0 মন্তব্যসমূহ