জাগো প্রহরী : চট্টগ্রামের দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা ৷ উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১২০ বছর ধরে মাথা উঁচু করে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র নেই দেশে এমন কোনো গ্রাম পাওয়া যাবে না। হাটহাজারী মাদরাসার যেকোনো সিদ্ধান্তকে দেশের সর্বসাধারণ শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করে থাকে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা শাহ আহমদ শফী দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দেশের সর্ববৃহৎ দীনি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। এখন তিনি শতবর্ষী আলেম। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। ফলে তাঁর পরবর্তী দায়িত্বশীল নির্বাচন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টায় দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে বলে মাদরাসা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর সঙ্গত কারণেই আগামীকালের শূরার সিদ্ধান্তটি দেশের কওমি মাদরাসা, ইসলামি দল ও ধর্মপ্রাণ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৭ সালের পর আগামীকালই অনুষ্ঠিত হচ্ছে শূরার বৈঠক। এই বৈঠক নিয়ে কেউ সরাসরি বক্তব্য না দিলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী বার্ধক্যজনিত অসু্স্থতায় ভুগছেন। তিনি চাচ্ছেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে শূরার সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তী মহাপরিচালক নির্বাচন করা হোক। তবে কার কাঁধে এই গুরুদায়িত্ব পড়বে সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যিনি হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক হবেন পদাধিকারবলে তিনি অন্তত দুই শতাধিক মাদরাসার মুরব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নেতৃত্ব দেবেন হেফাজতে ইসলামের মতো দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠনেরও। সে হিসেবে অধিক প্রসিদ্ধ ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম আসছে বারবার।
তবে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদরাসার বর্তমান সহযোগী পরিচালক হলেও তিনি মহাপরিচালক হবেন কি না সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। কারণ বাবুনগরীর শারীরিক অসুস্থতা এবং সরকারি সনদের প্রতি অনীহার বিষয়টি হাইয়াতুল উলয়ার অগ্রগতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় অনেকে প্রসঙ্গটি তুলে ধরছেন। আবার অনেকের মুখে আল্লামা বাবুনগরী ছাড়াও মহাপরিচালক পদে হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস, প্রবীণ আলেম মাওলানা শেখ আহমদ ও সাবেক মুহতামিম মাওলানা আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে, মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দীদার কাসেমীর নামও আলোচনা করতে শোনা যাচ্ছে।
হাটহাজারী মাদরাসা ঘিরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সক্রিয় ছিল হাটহাজারী ওলামা পরিষদ। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা মজলিসে শূরা যা সিদ্ধান্ত দেয় তা মেনে নেব। এমনকি মাওলানা আনাস মাদানী মুহতামিম হলেও আপত্তি নেই। তবে তা হতে হবে মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তক্রমে।
এদিকে দারুল উলূম হাটহাজারীর ১১ জন শূরা সদস্যের একজন শয্যাশায়ী হওয়ায় তাঁর উপস্থিতি অনিশ্চিত হলেও অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়। মজলিসে শূরার উল্লেখকযোগ্য সদস্যরা হলেন: এক. আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস। পরিচালক ও শাইখুল হাদীস, জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা। কো-চেয়ারম্যান, হাইয়াতুল উলয়া। দুই. আল্লামা মুফতি নুরুল আমিন। নায়েবে মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস, ফরিদাবাদ মাদরাসা ও যুগ্ম-মহাসচিব, বেফাক। তিন. নুরুল ইসলাম জিহাদী। পরিচালক, মাখজানুল উলূম মাদরাসা খিলগাঁও ও সহসভাপতি, বেফাক। চার. মাওলানা নোমান ফয়জী পরিচালক, আলজামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল, হাটহাজারী। পাঁচ, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী পরিচালক, জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর, ফটিকছড়ি। ছয়. মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী পরিচালক, ফতেপুর মাদরাসা, হাটহাজারী।
তবে মাদরাসার শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটাই চাওয়া, মজলিসে শূরার সদস্যরা যেন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে দায়িত্বভার তুলে দেন।
জাগো প্রহরী/ফাইয়াজ
0 মন্তব্যসমূহ