জাগো প্রহরী : কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যখন বৈশ্বিক নৌ বাণিজ্য রেকর্ড নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে এবং যাদের মধ্যে চীনও রয়েছে, এ অবস্থায় ভারত মহাসাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন শুরু করেছে বেইজিং। ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের আভিযানিক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে, কিন্তু চীন বিরোধী যে কোন নৌ তৎপরতা চালাতে গেলে তাদেরকে এজন্য বড় মূল্য দিতে হবে।
চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা বুধবার অ্যাডেন উপসাগরে পিপলস লিবারেশান আর্মি নেভির (পিএলএএন) ৬৯০ নৌ সেনার সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী ৩৫তম টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করেছে। ভারত মহাসাগরে জলদস্যু-বিরোধী টহল পরিচালনার জন্য এটা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ভারত মহাসাগরকে ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পিএলএএনের গাইডেড মিসাইল ডেসট্রয়াল দ্য তাইয়ান এবং জিংঝু ফ্রিগেট প্রথমবারের মতো এই অঞ্চল দিয়ে অতিবাহীত ‘জাহাজ ও নৌযানগুলোকে’ সুরক্ষা দেবে।
এই টাস্ক ফোর্সের মধ্যে অন্তত দুই ডজন নৌ হেলিকপ্টার রয়েছে। এগুলো সোমালিয়া উপকূলের কাছাকাছি নৌযানগুলোকেও সহায়তা করবে। পিএলএএন সেখানে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে নৌ এসকোর্ট মিশন চালিয়ে আসছে।
‘সুখের শিকারের’ মূল্য দিতে হবে
ভারতীয় নৌবাহিনী স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্যে থাকা সত্বেও তারা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের অবস্থান হারায়নি।
ভারতীয় নৌবাহিনী এখন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে এবং ১৮ এপ্রিল তারা এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে: “পূর্বে মালাক্কা প্রণালী থেকে পশ্চিমে বাবেল ম্যান্দেব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ মহাসাগর এলাকায় আমাদের জাহাজগুলো টহল অব্যাহত রেখেছে এবং অ্যাডেন উপসাগরে আমাদের বাণিজ্য জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এবং জলদস্যু প্রতিরোধী টহল অব্যাহত রয়েছে”।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাবের উল্লেখ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক মুখপাত্র শর্মা বলেন: “ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনা পিএলএ নেভির উপস্থিতির কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটা ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয় কারণ তাদেরকে সবসময় তাদের চলাচলের উপর নজর রাখতে হয়। এই জাহাজগুলো অ্যাডেন উপসাগরে সাধারণ টহল ছাড়াও আরও নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে”।
শর্মা আরও বলেন যে, এটা ভারতীয় নৌবাহিনীর উপর আর্থিক বোঝা বাড়াবে, কারণ তারাও সম্প্রতি চীনকে মোকাবেলার জন্য কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করেছে।
সবার জন্য নৌ মোতায়েন
এশিয়ার এই দুই বড় দেশ বার বার জোর দিয়ে বলে এসেছে যে, তারা শুধু নিজেদের প্রয়োজনে নৌ মোতায়েন করেনি, বরং বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীদেরকেও তারা সহায়তা দিতে পারেন।
অতীতে দেখা গেছে যে, এ ধরণের মোতায়েনের কারণে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সরকারগুলোর জন্য সেটা সঙ্কটের সময় ইতিবাচক কাজ দিয়েছে। ২০১৮ সালে এটা আরও স্পষ্ট হয়, যখন মালদ্বীপের আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে এবং ভারতকে তখন তাদের বিমান ও জাহাজগুলোকে দক্ষিণের ঘাঁটিগুলোতে মোতায়েন করেছিল।
সে সময় চীন চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাদের নৌ যুদ্ধ শক্তিকে মোতায়েন করেছিল, যার মধ্যে এক ডজন যুদ্ধজাহাজ ছিল। ফলে ভারতকে আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সরকারের বিরুদ্ধে কোন জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার অবস্থান থেকে পিছু হটে আসতে হয়েছিল।
নৌবাহিনীর জন্য কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান কারাম্বির সিং ৭ মার্চ এক ভিডিও বার্তায় কমাণ্ডারদেরকে বলেছেন যে, “সব কিছু এখন স্বাভাবিকভাবে চলার কোন সুযোগ নেই”।
সে কারণে, সঙ্কটের সময়ে চীনা মোতায়েনের কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। কারণ ভারতের জাহাজগুলোতে অন্যান্য নৌবাহিনীর তুলনায় অনেক বেশি জনবল রয়েছে, যেটা বহুপাক্ষিক মহড়ার সময় স্পষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পূর্ণ সক্ষমতার সাথে কোভিড-১৯মুক্ত থেকে কাজ করাটা তাদের জন্য খুবই কঠিন।
সূত্র : স্পুটনিক
জাগো প্রহরী/ফাইয়াজ
0 মন্তব্যসমূহ