মুসা আল হাফিজ ৷৷
৫ মে। ভোর থেকে এলোমেলো আর আবেগদীপ্ত যা হচ্ছিলো, পল্টনে যা ঘটছিলো, বায়তুল মুকাররমের পাশে যে খেলা চলছিলো, সবই প্রত্যক্ষ করেছি পথে পথে চোখ মেলে।
রক্ত,লাশ, উত্তেজনা, বিশেষ ধরণের প্রচেষ্টা দেখতে দেখতে পল্টন থেকে যখন শাপলাচত্তরে যাই,তখনো ঘোষণা হয়নি, শাপলার পাশে সমাবেশের অনুমতি মিলেছে।
ঘোষণার আগে সেখানে কী পরিস্থিতি ছিলো, কারা সেখানে ছিলেন, কারা ঘোষণার আগেই শাপলার পাশে হামলা করেছিলো পুলিশের উপর, আহত পুলিশ কী বলেছিলো আমাদের লক্ষ্য করে, সবই মনে ভাসছে।
একটি প্রবল মিছিল এগুতে লাগলো শাপলা থেকে। 'চলো চলো শাহবাগ চলো,নাস্তিকদের খতম করো'। মিছিলটি বিপদ ঘটাবে,স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। শাপলায় তখন হেফাজতের মাত্র ক' জন কর্মী। তারা ছিলেন ছাত্র।
সহিংস সেই মিছিলকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিলো না।অনেক দূর এগিয়ে গেলো মিছিল।ক্রমেই সেটা বড় হচ্ছিলো, বাড়ছিলো ভয়।থামানোর সব চেষ্টা যখন বিফল হলো,সেই কর্মীদের বললাম, শুয়ে পড়ো মিছিলের সামনে।তারা সম্ভবত আমাকে চিনতো না। আমার সাথে ছিলো বেশ ক' জন ছাত্র। তারা শুয়ে পড়লো।অন্য কর্মীরাও একই কাজ করলো।মিছিলকে তবুও আটকানো যাচ্ছিলো না।এরই মধ্যে আদেশ এলো,সবাই যেন শাপলায় জড়ো হন। তখন সেই সহিংস মিছিলের বিপরিত দিক থেকে ' এই মাত্র আদেশ এলো,চলো চলো শাপলা চলো' শ্লোগান তুলে কত কষ্টে সেই ক' জন মাত্র কর্মীসহ শাপলায় ফিরতে পেরেছিলাম, সেটা এখনো যেন চোখে ভাসছে।সেই মিছিল ঠেকাতে না পারলে পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যেতো। শাপলাচত্তরে সমাবেশের পরিবেশ ও সুযোগ থাকতো কি না, সন্দেহ। কোনো নেতাই তখনো শাপলায় আসেন নি। স্থানীয় হেফাজতকর্মীদের সহায়তা করেছিলো পুলিশ। একটি রিকশায় উঠে মাইকে প্রথমে কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করা হলো। তারপরে বক্তব্য রাখলেন একজন, এরপর আরেকজন। অনিশ্চয়তা বাড়ছিলো। কোনো নেতাকেই দেখছি না।ব্যাপার কী? একজন মাইকে বক্তব্যের জন্য আমার নাম ঘোষণা করলেন। বক্তব্য রাখছিলাম আর তাকাচ্ছিলাম চারদিকে।
দেখলাম ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মুনতাসির আলী ভাই আসছেন। আমার বক্তব্য শেষে তিনি বক্তব্য রাখলেন। এরপর দেখলাম আসছেন আরো কিছু ময়দানী নেতা। যারা জমিয়ত,মজলিস বা এ ধরণের দলের হয়ে রাজপথে লড়েন।শাপলা অভিমুখে আসতে থাকলো জনস্রোত। হাইপ্রোফাইল নেতারাও আসলেন। মঞ্চ সাজালেন এবং জনতাকে মাতালেন।
এ হচ্ছে শুরুর গল্প। যেখানে আমি ছিলাম গোড়া থেকেই প্রত্যক্ষদর্শী।
মধ্যখানের এবং শেষের গল্পও দেখেছি। তাকদিরের ইশারায় সামান্যের জন্য রক্ষা পেয়েছি গুলি থেকে।চোখের সামনে দেখেছি তাণ্ডব। ভয়, রক্ত,জীবনের বিপন্নতা অপর দিকে শাহাদাতের তামান্না ও জোশ।
আর দেখেছি পলায়ন, দিশাহীনতা,হটকারিতা, চরম অনিশ্চয়তা ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং....
আমার দেখা শাপলার গল্প অন্য রকম। যে সব গল্প শুনি, তার অনেকটার সাথে মিলবে না। সেই দেখার ইতিবৃত্ত বলা হবে কি না, জানি না। এই ইতিবৃত্তে আছে এমন অনেককিছু, যা আত্মদানের সোনার হরফে লেখার মতো। আবার আছে এমন অনেক অনেক বিষয়,যা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারায় কওমি পরিমণ্ডল নিজের ছোরায় নিজের হাত পা কাটছে এবং কাটতে থাকবে!
লেখক : কবি,চিন্তক ও সমাজ বিশ্লেষক
জাগো প্রহরী/ফাইয়াজ
0 মন্তব্যসমূহ