জাগো প্রহরী : করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদ- বিশেষজ্ঞ-পেশজীবীদের সমন্বয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদী ‘জাতীয় পূনর্গঠন কমিটি’ গঠনসহ ৮ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে ‘নাগরিক ঐক্য’।
রবিবার ( ৩মে ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক মুক্ত আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ প্রস্তাবনা দেন।
তিনি বলেন, করোনা একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি। প্রথাগত যুদ্ধের চাইতে এই যুদ্ধ আরো ভয়ংকর। এই যুদ্ধ অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীর সব দেশ, সব শ্রেনী-পেশার রাজনৈতি দলের মানুষকে নিয়ে যৌথভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু সরকার সে দিকে যায়নি।এমনকি এই ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরেও সেই ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এই দায় এককভাবে তাদেরকেই নিতে হবে। এই সময়ে এসেও সরকার যদি মনে করে তারা জনগনেরে পাশে দাঁড়াবে, তাহলে কিছু পদক্ষেপ এখনই জরুরী ভাবে নিতে পারে। সেটা মাথায় রেখে নাগরিক ঐক্য এই মুহুর্তে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে ৮ দফা প্রস্তাবনা রাখছে।
প্রস্তাবনাগুলার মধ্যে রয়েছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, এনজিও প্রদিতনিধির সমন্বয়ে ৩-৫ বছর মেয়াদী একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পূনর্গঠন কমিটি’ গঠন, ত্রাণ চুরি-স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে শাস্তির ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা,কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচ, বেতন ইত্যাদি আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ, মাদ্রাসা ভিত্তিক লিল্লাহ বোডিং, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী তিন মাসের খাবার সরবারহ, ‘দিন আনে দিন খাওয়া’ দুই কোটি পরিবারকে তিন মাসের খাবার সরবারহ নিশ্চিতকরা, মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত ২ কোটি মানুষের জন্য ৫০% ভর্তুকি দিয়ে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, দরিদ্র কৃষকদের সকল ঋণ মওকুফ, মাঝারি চাষীকের ৬ মাসের জন্য ঋণ মওকুফ, চলতি বোরো মৌসুমের খাদ্য শস্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে কর্তন, ত্রাণ বিতরণ ও টিসিবি কাযর্ক্রম তদারকি, রেশনিং এবং কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত, সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং এনজিও‘র সমন্বয়ে তালিকা প্রণয়ন, বিতরণ ও বিপননের ব্যবস্থা করণ, চিকিৎসক,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য পর্যাপ্ত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা, সকল ধরনের গৃহস্থালী ইউটিলি বিলসমূহ আগামী তিন মাসের জন্য মওকুফ, ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের প্রদান, ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের মানুষের বাড়িভাড়ার অর্ধেক সরকারকে বহন করা এবং সরকারের ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা বিতরণ তদারিকীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান গর্ভনর, শীর্ষ পর্য়ায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিবর্গ, এনজিও প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ মনিটরিং সেল গঠন প্রভৃতি।
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এই ধরনের দ্বি-চারিতা পৃথিবীর অন্য কোথাও হচ্ছে না। বিভিন্ন ভুল ও ক্রটির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের এখানে বলবার পরেও যখন সেটা করা হচ্ছে তখন আর কি বলব? ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ : বৈশ্বিক মহামারী এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে বলব, ভালো কাজ একলা করা যায় না। ভালো কাজ করতে হলে সর্বদলীয় কমিটি দরকার। সকল রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিতে হবে। আপনি সকলকে নিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে। আপনাকে আমি মনে করাতে চাচ্ছি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা। তার ওপর ছোট একটা ডকুমেন্টারী আছে ‘আনফ্যাশনাবল ফ্যামিন’। গুদামের খাবার আছে তবু মানুষ অনাহারে ছিলো। ঠিক আজকেও আপনাদের মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য ১৬ লক্ষ টন এখনো আপনার খাবার গুদামে আছে।আপনাদের হিসেবে যাই- এককোটি পরিবার তারা অতি গরিব লোক, কাজ না থাকার আরো এক কোটি পরিবার আছে-এই দুইটি কোটি পরিবারের খাবার দরকার। বেঁচে থাকার জন্য যেমন বাতাস দরকার সেভাবে খাবারও দরকার। আপনার ইনসেনিভ কোথায় যাচ্ছে ধনীদের কাছে।কৃষিদের দুরাবস্থার কথাও তাদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারকে ধান ক্রয় করার দাবি জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন,এই করোনা দুর্যোগে কৃষকদের ধান কাটার নামে মন্ত্রী-এমপিদের ফটোসেশন খুবই হাস্যকর।সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন,এই করোনা যুদ্ধের সম্মুখসারীর যোদ্ধা ডাক্তার,পুলিশ ও সাংবাদিকরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পোশাক পাচ্ছেন না।এছাড়া করোনা চিকিৎসার অব্যবস্থাপনা, গাফিলতির কথা তুলে ধরেন তিনি।
স্কাইপের আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরো অংশ নেন কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বিএনপির এজেডএম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মুনির হোসেন কাসেমী, এবি পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল ওহাব মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নূরুল হক নূর প্রমুখ।
জাগো প্রহরী/গালিব
0 মন্তব্যসমূহ