জাগো প্রহরী : বাংলাদেশের প্রথম সারীর কওমী মাদরাসাসমূহের মধ্যে অন্যতম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. প্রতিষ্ঠিত গোপালগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কওমী মাদরাসাকে দেওয়া সহযোগিতার মধ্যে গহরডাঙ্গা মাদরাসার অংশ ফিরিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে গহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রুহুল আমীনের ছেলে ও মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ওসামা আমীন ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন- বর্তমান এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান নয় বরং সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই যে আমাদের গওহারডাঙ্গা মাদরাসার এই অনুদান প্রয়োজন নাই। একই সাথে তিনি বলেন- ‘প্রত্যাখ্যান’ শব্দটি ব্যবহার করে আমাদের আকাবিরদের ভালো কাজগুলোকে রাজনৈতিক রূপ দেয়া পছন্দ করেন না গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুরুব্বিরা।
বিস্তারিত আলোচনায় তিনি আরও লিখেছেন- করোনাভাইরাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে থমকে দাড়িয়েছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশে চলছে লাগাতার লকডাউন। পরিস্থিতি বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের কওমি মাদরাসাগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড সমূহ।
পরিস্থিতির অনিবার্যতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ সল্প সুদে ঋণ, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের ৬ হাজার ৯ শত ৫৯ কওমি মাদরাসার জন্য (যদিও কওমি মাদরাসার সংখ্যা আরো অনেক বেশি) ৮ কোটি ৩১ লক্ষ ২৫ টাকা সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে সরকার সকলের পাশাপাশি কওমি মাদরাসার কথা স্মরণ রেখেছেন এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জনাই। অনুদান আট কোটি হোক বা আটশো কোটি তিনিই সর্ব প্রথম আপদকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে কওমি মাদরাসার কথা স্মরণে রেখেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।
সরকারের পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে মাদরাসা কতৃপক্ষ ও আলেম উলামারাও অসহায়দের যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগিতা করেছে এবং বর্তমানেও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।।
১৯৬৪ সনে এয়ার মার্শাল আইউব খান মোজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুর ছদর ছাহেব হুজুর রহ.-এর নৈকট্য অর্জনের জন্য গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় দশ লক্ষ টাকা পাঠান এবং বলেন, হুজুর! এই টাকার কোনো হিসাব দিতে হবে না। হযরত ছদর সাহেব রহ. ঐ টাকাটি গ্রহন না করে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। এরকম ঘটনা হুজুরের অসংখ্য রয়েছে।
আমাদের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার গত বছরের ব্যয় প্রায় আট কোটি টাকা। এর সব ব্যবস্থা হয় জনগণের স্বতস্ফূর্ত দানের মাধ্যমে। আল্লাহর গায়েবী খাজনা থেকে।
বর্তমান এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান নয় বরং সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে চাই যে, আমাদের গওহারডাঙ্গা মাদরাসার এই অনুদান প্রয়োজন নাই।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ! এই বরাদ্দটি আট কোটি না আটশ কোটি আমরা জানতে চাই না। যাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সামনে থেকে দেশের জন্য অক্লান্ত ভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে ডাক্তার-পুলিশ-ঔষধ কর্মী পরিচ্ছন্ন কর্মী ইত্যাদি আপনি তাঁদের জন্য খরচ করেন আমরা খুশি থাকবো এটাই আমাদের আকাবিরদের দেখানো পথ।
এই সিদ্ধান্তটি একান্তই আমাদের, ভিন্ন মতের যাঁরা রয়েছেন তাঁদের প্রতি আমাদের স্বশ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি নাই।
সরকার বরাদ্দ দিয়ে দোষী নয় সরকারের দায়িত্ব সরকার পালন করেছে। আমাদের ফেরত দেওয়াটাও কোনো দোষের নয় তবে ‘প্রত্যাখ্যান’ শব্দটি ব্যবহার করে আমাদের আকাবিরদের ভালো কাজগুলোকে রাজনৈতিক রূপ দেয়া পছন্দ করেন না গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুরুব্বিরা। আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি মুতাবেক চলার তৌফিক দান করুক।
জাগো প্রহরী/গালিব
0 মন্তব্যসমূহ