আমার চোখে ফরহাদ মজহার : মুসা আল হাফিজ


মুসা আল হাফিজ ৷৷

ফরহাদ মজহারকে নিয়ে একটু বলি।বদলে গেছেন। পোশাকে, দাড়িতে, বেশে বদলে যাওয়াটা দেখতে পাচ্ছেন। ভেতরগত বদলে যাওয়াটা খোলা চোখে দেখতে পাওয়া কঠিন। 

এই যে বদলে যাওয়া ও বদলাতে পারা, এটা ফরহাদ মজহারের শক্তি। সত্যের অনুসন্ধান থাকতে হয় একজন সৎ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে। বাংলাদেশে ফরহাদ মজহারের মধ্যে এটা আছে। এর মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী গতিশীল হন।মানে তিনি মত বদলাতে পারেন,নিজেকে পুনর্পঠন করতে পারেন,পুনর্গঠন করতে পারেন,নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। 

দু' দিন আগে তাঁর সাথে কথা বললাম প্রায় দুই ঘন্টা। আলাপ যে শেষ হয়ে গিয়েছিলো,তা না। সেটা পাঁচ ঘন্টায়ও যেতে পারতো।  যুমে একটি ক্লাস নিতে হয় আমাকে,সে জন্য আলাপটি মাঝপথে থেমে গেলো। 
কী ছিলো আলাপে! করোনাপরিস্থিতি, জীবাণুঅস্ত্র, বিশ্বরাজনীতি, পোস্টকরোনা দুনিয়া, চীন ও পাশ্চাত্য এবং অবশ্যই ইসলাম।

ইসলামের প্রতি গভীর প্রেম আছে মজহারের,আমি সাক্ষী দিতে পারি। কিন্তু তিনি ইসলামকে যেভাবে ব্যক্ত করেন, সেখানে যে আকিদার জায়গা থেকে  সমস্যা থাকে না, তা তো বলার কোনো সুযোগ নেই। আমি সমস্যাগুলো জানি,ফরহাদ মজহারকে জানি এবং এও জানি যে, এ থেকে উত্তরণ অসম্ভব নয়। 

লালনকে নিয়ে তার যে মগ্নতা, সেখানে তার ব্যাখ্যা নানাভাবে বদলেছে। আবারো বদলাবে না কিংবা তার অবস্থান থেকে তিনি সরে আসবেন না, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

ফরহাদ মজহারের এই বদলাতে পারাকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি।আমি পারি না তাঁর আস্তানায় যেতে। আমার কিছু ছাত্র যায়। তাঁর আপন করতে পারার শক্তি অসাধারণ। 

এক ছাত্র তার বাসায় রাত্রি যাপন করে মাঝেমধ্যে।  সে বললো, রাত তিনটায় ফরহাদ মজহার ঘুম থেকে উঠেন,ধ্যান করেন নিয়মিত। রমজান ছাড়াও রোজা রাখেন প্রায়ই। কিন্তু তার সাধনাগুলো শরিয়ার অনুসরণে হয় না। তিনি হাদীস নিয়ে আপত্তি তুলেন। শরিয়ার সীমানায় আসতে চান না। ইসলামের আধ্যাত্মিকতাকে তিনি নিবিষ্টচিত্ত্বে অনুভব করছেন।  ছেলেটিকে তিনি ইমাম গাযালীর রহ. একটি কিতাব অনুবাদ করতে দিয়েছেন, যার অনুবাদ সে সম্পন্ন করেছে।  

ছেলেটি তাঁকে ভালোবাসে। বলে,'  উস্তাদ,আপনি চেষ্টা করুন।এতো মহান একজন মানুষ। ইসলামের পক্ষে বলার কারণে রাষ্ট্র,সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া ও বহিঃশক্তির আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তিনি কোন দিন চলে যাবেন। চেষ্টা করেন, যেন তিনি অন্তত সুন্নাহের আওতায় এসে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।সুন্নাহে না এসে তিনি মারা গেলে যে পরিণতি,সেটা আমার জন্য বরদাশত করা কঠিন।' 

ছেলেটির বেদনা আমি বুঝি। আমি চাই,এ বেদনার চুল্লি প্রত্যেক তালেবে ইলমের মধ্যে,আলিমের মধ্যে  জ্বলতে থাকুক। 

 এই যে ' বরদাশত করা কঠিন' সেটা আমার ক্ষেত্রেও সত্য। জনাব মজহার এই বেদনাকে অনুভব করবেন, ইন শা আল্লাহ। 

বাংলাদেশ তাঁর মতো আরেকটি বুদ্ধিজীবীর জন্ম দিতে পারেনি এ অবধি।  কাজী আবদুল ওদুদ কিংবা  আহমদ ছফাদের উপরে আমি তাঁকে দেখি। আজকের বাস্তবতায় আত্মবিক্রিত, অমেরুদণ্ডী, কূপমণ্ডূক বুদ্ধিজীবীদের ভিড়ে এই স্বাধীন, উদ্দাম নদীস্রোত বাংলাদেশের চিন্তার ইতিহাসে এক স্বর্ণময় অধ্যায়। বাঙালি মুসলিমের প্রতি অনুরাগ থেকে জনাব মজহার ইসলামের প্রতি পক্ষপাতে সফর করেছেন। সেখান থেকে তাঁর সফর ইসলামের অনুবর্তিতায় এগিয়ে আসবে, সে প্রত্যাশা খুবই স্বাভাবিক। এ প্রত্যাশার সাথে যুক্ত আছে বাঙালি মুসলমানের সম্ভাবনাময় একটি অংশের নতুন আত্মসংবিৎ! 

লেখক : কবি,চিন্তক ও সমাজ বিশ্লেষক

জাগো প্রহরী/গালিব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ