মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী ৷৷
বর্তমান আমাদের দেশে তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। এক. শুধু জাগতিক শিক্ষা। দুই. ধর্মীয় ও জাগতিক উভয়ের সমন্বিত শিক্ষা। তিন. শুধু ধর্মীয় শিক্ষা। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড বলে আমাদের সমাজে যে বচন চালু আছে তার বাস্তব চিত্রগুলো ফুটে উঠে জাগতিক শিক্ষার কেন্দ্র গুলোতে। যদি আরো একটু ব্যাখ্যা করি তা হলো; শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর একটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড হচ্ছে অর্থ। শিক্ষা ছাড়া জাতি যেমন মেরুদণ্ডহীন, তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল রাষ্ট্রও মেরুদণ্ডহীন। একটি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইলে যেমন শিক্ষার প্রয়োজন ঠিক তেমনি একটি রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হলে অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল হওয়াটাও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। মোট কথা জাতি ও রাষ্ট্র, শিক্ষা এবং অর্থ একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি অন্যটি ছাড়া অচল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলেও ধ্রুব সত্য যে, বর্তমান আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে বানিজ্য ও অর্থনৈতিক যে ধ্বস শুরু হয়েছে, এর সাথে জড়িত সিংহভাগ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত । যারা শিক্ষিত হয়ে জাতির মেরুদণ্ড হবার পরিচয় দিচ্ছে তাঁরাই আবার রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। দেশের কোটি কোটি টাকা রাতের আধারে লুটপাট করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিসংখ্যানগুলো দেখলে বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, খুন-গুম, ধর্ষণ চুরি-ডাকাতি, দূর্নীতি -চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী ও কালোবাজারিসহ সকল অপরাধের মূলে অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা। এমনকি বহির্বিশ্বে স্বাধীন এই দেশটির সুনামও চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে তারা-ই!
আর এর পুরো বিপরীতে রয়েছে কওমী মাদরাসা। সৎ, দক্ষ, আল্লাহ ভীরু ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক গড়ে তোলার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এই কওমী মাদরাসা। পদ্ধতিগতভাবে ভারতের ঐতিহ্যবাহী দারুল উলূম দেওবন্দ কওমী মাদরাসার মূল মারকায বা কেন্দ্র হলেও শুরুটা হয়েছিল ১৪ শ বছর আগে মসজিদে নববীর আঙিনায় মাদরাসা সুফ্ফা নামে। হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. ছিলেন সেই মাদরাসার ছাত্র আর আল্লাহর রাসূল ছা. ছিলেন শিক্ষক।
মাদরাসা সুফ্ফার নমুনায় সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বলিষ্ঠ চেতনায় উজ্জীবিত ও দ্বীনি চেতনায় উদ্দীপ্ত একদল আত্মত্যাগী সৎ- দক্ষ, কর্মঠ, খোদাভীরু দেশপ্রেমিক গড়ে তোলার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইশারায় হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. এর নেতৃত্বে যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গানেদীনের হাতে ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের ৩০ ই মে ভারতের উত্তর প্রদেশস্থ সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক গ্রামে, ঐতিহাসিক সাত্তা মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি ডালিম গাছের নীচে, বর্তমান কওমী মাদরাসাগুলোর মূল কেন্দ্র বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়!
কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই ঈমান আকিদা, ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুন, ইসলামের হেফাজত, প্রচার -প্রসার ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ অতীব জরুরি বাস্তবমুখী ও ফলপ্রসূ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিশেষ করে উপমহাদেশের রাজনৈতিক তৎপরতা, উপনিবেশিক শক্তি ও পরাধীনতার জিঞ্জির ভাঙার লক্ষ্যে আযাদী আন্দোলনে অংশ গ্রহণসহ মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক চিন্তা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি সহ সর্বমহলে কওমী মাদরাসা ও ওলামাদের অবদান অপরিসীম।
ভাষা আন্দোলনে কওমী উলামায়ে কেরামদের অবদান
'৫২ র ভাষা আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কওমী মাদরাসার সূর্য সন্তান মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। দারুল উলূম দেওবন্দের কৃতী সন্তান মাওলানা তর্কবাগীশ ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার নিরীহ ছাত্রদের উপর যখন পাকিস্তানের হানাদারবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায় তখন সর্বপ্রথম পার্লামেন্টের অধিবেশন ত্যাগ করে রাস্তায় নেমে আসেন মাওলানা তর্কবাগীশ। এবং মাওলানা তর্কবাগীশই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলায় বক্তৃতা করেন এবং বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তাঁর ত্যাগ প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবে অনন্তকাল। (আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে)
স্বাধীনতা যুদ্ধে কওমী মাদরাসা ও ওলামায়ে কেরামদের অবদান
১৯৭১ সাল। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন এদেশের মুক্তিকামী সর্বশ্রেণীর মানুষ। যাদের অবদান অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। দেশের মুক্তিকামী সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ রক্ষায় দ্বিধাহীন ভাবে ঝাপিয়ে পড়েছেন এবং পিছিয়ে ছিলেন না এদেশের আলেম ওলামা।নিজে যুদ্ধ করার পাশাপাশি উৎসাহিত করেছেন লাখো মানুষকে।যাদের মাঝে উল্লেখ্যযোগ্য: মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাসানী,মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ,মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ,মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালবাদী,মাওলানা ওলীউর রহমান,মুহাদ্দিস আব্দুস সোবাহান,শহীদ আল্লামা দানেশসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম। শুধু কি আলেম সমাজ? মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মাদরাসাসমূহ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এক একটি ক্যাম্প। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শহীদ মেজর জিয়াউর রহমান পটিয়া মাদরাসায় অবস্থান নিয়েই চালু করেছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র। আজও সেই অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র "পটিয়া মাদরাসার মেহমানখানা" ইতিহাসের বিরল সাক্ষী হয়ে আছে।
যশোর রেল স্টেশন মাদরাসা প্রাঙ্গণে ২১ শহীদের গণকবরও এটাই সাক্ষী দেয় মুক্তিযোদ্ধারা মাদরাসায় অবস্থান করতেন। বারিশালের চরমোনাই মাদরাসা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রাগার। ছিল তাদের আশ্রয় কেন্দ্র। এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যা এখানে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
অথচ, দুঃখের সাথে বলতে হয় আজ স্বাধীনতার ইতিহাস রচনা হয়েছে সেই মহান ব্যক্তিবর্গদের বাদ দিয়ে । সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে হযরত ওলায়ে কেরামকে। রাজাকার, আল বদর আর দেশদ্রোহীদের কাতারে দাঁড় করানো হয়েছে আলেমদের। আক্রমণ করা হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। আঁকা হয়েছে/হচ্ছে বিভিন্ন কালিগ্রাফি। নির্মাণ করা হয়েছে,এখনো হচ্ছে অসংখ্য মুভি,নাটক,ফানি ভিডিও!ওলামায়ে কেরামকে উপস্থান করা হচ্ছে ব্যঙ্গাত্বক ভাবে।
যার মূলে রয়েছে স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী শক্তি। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আজও মেনে নিতে পারছে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আলেম ওলামা কখনো দেশ বিরোধী ছিলেন না। এদেশ স্বাধীনের পিছনে যেমন আলেম ওলামার প্রয়োজন হয়েছে, ঠিক দেশকে এগিয়ে নিতে হলেও আলেম ওলামার প্রয়োজন আছে! আলেম ওলামাকে এড়িয়ে দেশ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার তৌফিক দান করুন!
শিক্ষা ব্যবস্থায় কওমী মাদরাসার অবদান
যে যাই বলুন না কেন, আমাদের মতে বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা ও সুন্দরভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে কওমী মাদরাসার অবদান অপরিসীম। দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, হল দখল, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মিনি ক্যান্টমেন্ট বা পতিতলায় তৈরি করাসহ শিক্ষার পরিবেশকে বিনষ্ট বা প্রশ্নবিদ্ধ করার যে প্রয়াস জাগতিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে চোখে পড়ে তা কওমী মাদরাসাগুলোতে কখনো কল্পনাও করা যায় না! মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, সম্প্রীতি, সহানুভূতি, একে অপরের প্রতি কল্যাণকামীতা ও সর্বোপরি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টাই একমাত্র কওমী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
একশ্রেণির জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, যারা সময়ে অসময়ে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থা ও কওমী ওলামাদের দিকে আঙ্গুল তুলে কওমী মাদরাসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনখারাবি, মাস্তানি, ধর্ষণ, গুম-হত্যা, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ, হরতালের নামে ভাংচুর, উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয় তখন তাদের কলম বা মুখ কোনটাই চলে না। তাঁরা তখন বধির ও বোবা হয়ে যায়। অথচ, কওমী ওলামাগণ যাঁরা সর্বদা কুরআন হাদিসের জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত, প্রয়োজন ছাড়া কখনো বাহিরেও যারা বের হয় না, তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীর তকমা। তাদের কেন এই অপতৎপরতা। এগুলো উদ্দেশ্য কী? ভাবতে হবে দেশের সচেতন মহলকে।
নিরক্ষরতা দূরীকরণে কওমী ওলামায়ে কেরাম
আমাদের দেশে বিদ্যা এখন পণ্যের মত বিক্রি হয়। বিদ্ধাণের কোন কদর নেই৷ এখন বিদ্ধার্জনের আগেই বিদ্ধান হওয়ার প্রতিযোগিতা হয়। আর সেজন্য পরিক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস এখন মামুলি ব্যপার। আবার শোনা যায় সনদপত্র বিক্রির কথা। একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিয়ে দেওয়া বা অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়া এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই তো আমার দেশের মেধাবীরা বুক ফুলিয়ে বলে 'আই অ্যাম জিপিএ ফাইভ। কারণ, তারা বিদ্যার্জনের আগেই বিদ্ধান হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। আর অর্থের বিনিময়ে পেয়েছে জিপিএ ফাইভ। এত গেলো যাদের অর্থ বিত্ত আছে তাদের কথা। অর্থের বিনিময়ে হলেও জিপিএ ফাইভটা পেয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত এই দেশের সিংহ ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। স্কুল কলেজে যাওয়া তো দূরের কথা, ঘরে বসে প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও তাদের মিলে না। পরীক্ষায় অর্থের হাতবদলে জিপিএ ফাইভ পাওয়া পর যে বইগুলো ঠোঙার দোকানে বিক্রি করে, তখন দারিদ্রতার চাপ সহ্য করতে না পেরে দেশের হাজারো শিশু সেই বইগুলো দিয়ে ঠোঙা বানাতে ব্যস্ত থাকে। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী যখন স্কুলে যায়, তখন দেশের শতশত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা রাস্তায় কাগজ টোকায়। অর্থের অভাবে যেন কোন শিশু জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই দেশের কওমী মাদরাসাগুলো শত সহস্র হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। যা জাগতিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে বিরল। যে দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে সেটি কওমী মাদরাসা সুন্দর ভাবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে । দেশের হাজার হাজার নূরানী মাদরাসা থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক কোমলমতি শিশুরা প্রথমিক জ্ঞানার্জন করছে।
বেকারত্বরোধে কওমী ওলামায়ে কেরাম
বেকারত্ব! একটি অভিশপ্ত নাম। হাজারো মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের নাম বেকারত্ব। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান ও দ্বীপদেশ মালদ্বীপে বেকার মানুষের হার বেশি।
আইএলওর হিসাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। এ সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধিপাচ্ছে । (প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণ ২৪ জানুয়ারি ২০১৮)
বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে সবাই সচেষ্ট হলেও আন্তরিকতার বড় অভাব। লাগামহীন দূর্নীতি, চাঁদাবাজি, চাকরির ক্ষেত্রে ঘুষের ছড়াছড়ি, নানান অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছে দেশের কর্মসংস্থানগুলো। যে দেশে জ্ঞানীর কদর নেই সেদেশে বেকারত্ব থাকাটা আশ্চর্যের কিছু নয়! এসএসসি ফেল ছাত্র যখন এসি রুমে বসে দূর্নীতির আখড়া খুলে বসে, ঠিক তখন বিসিএস ক্যাডার একটা চাকরির জন্য মানুষের দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে জুতোর তলা ক্ষয় করছে। একটা চাকরি জন্য মারামারি, রাস্তা অবরোধ, বিভিন্ন কার্যালয়ে স্মারকলিপীসহ ইত্যাদি প্রতিবাদ মূলক কর্মসূচি চোখে পড়ে। সর্বশেষ কোঠা সংস্কার আন্দোলন আমরা সবাই প্রত্যক্ষ করেছি।
কিন্তু এর পুরো বিপরীত চিত্র দেশের কওমী মাদরাসাগুলোতে। বেকারত্বের কোন ছাপ বা কোন অভিযোগ অনুযোগ নেই কওমী ওলামাদের। চাকরির জন্য আন্দোলন -সংগ্রাম বা মিছিল মিটিংয়ের কোন প্রয়োজন হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করে প্রতিবছর কওমী মাদরাসা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বের হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী চাকরির জন্য কারো কাছে কোন অভিযোগ বা অনুযোগ দেয়নি। কোন আন্দোলন -সংগ্রামেরও প্রয়োজন পরেনি। এমনকি কোন কওমী শিক্ষার্থী বেকার বসে আছে এমন চিত্রও কোথাও দেখা যায় না। মোট কথা কওমী শিক্ষার্থীরা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেদের বের করে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিয়েছে। সরকার বা কোন মন্ত্রণালয়ে চাপ সৃষ্টি, রাস্তা অবরোধ কিংবা কোন সংগ্রামের প্রয়োজন পড়েনি। মোট কথা বেকারত্বদূরীকরণে কওমী মাদরাসার ভূমিকা অপরিসীম।
এছাড়া কওমী ওলামাদের অসংখ্য অবদান রয়েছে, যা এই ছোট্ট পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন ৷ আমিন ৷
লেখক : মুহাদ্দিস, হাটহাজারী মাদরাসা ও কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
জাগো প্রহরী/এফ আর
0 মন্তব্যসমূহ